দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে যে কোনো শর্তে জামিনের আবেদন করেছেন।
রোববার দুপুর ২টার দিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭’র বিচারক শহিদুল ইসলামের আদালতে এ আবেদন করে তিনি। এছাড়া কারাগারে উন্নত চিকিৎসা ও প্রথম শ্রেণির ডিভিশন চেয়ে আরো দুইটি আবেদন করা হয়েছে।
আবেদনে হাজী সেলিমের আইনজীবী শ্রী প্রাণ নাথ উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালে ওপেন হার্ট সার্জারির সময় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ বাক-শক্তিহীন অবস্থায় রয়েছেন হাজী সেলিম। তিনি দেশ ও বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। জেল হাজতে থাকলে চিকিৎসার অভাবে ও বাক-শক্তিহীনের কারণে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ কারণে যে কোনো শর্তে তার জামিন আবেদন করছি। জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না। তাই আপিল শর্তে আত্মসমর্পণ পূর্বক তার জামিন আবেদন করছি।
গত ২৫ এপ্রিল দুপুর ৩টার দিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলামের আদালতে হাইকোর্ট থেকে মামলার নথি এসে পৌঁছায়। এদিন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে রায়ের নথি পাঠানো হয়।
এর আগে হাজী সেলিমকে বিচারিক (নিম্ন) আদালতে দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
২০২১ সালের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশ পায় রায়।
এছাড়া জরিমানার টাকা অনাদায়ে হাজী সেলিমকে আদালত আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন এবং রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আত্মসমর্পণ না করলে জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। এছাড়া জব্দ করা হাজী সেলিমের সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে বলা হয়।
জরুরি অবস্থার সময় ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এরপর ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল হাজী সেলিমকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
পরে ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাজী সেলিম এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট ১৩ বছরের সাজা বাতিল করে রায় দেন। এরপর হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে দুদক।
শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের ওই রায় বাতিল করেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে হাজী সেলিমের আপিল পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর শুনানি শেষে চূড়ান্ত রায় দেন হাইকোর্ট। সেখানে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১৩ বছরের কারাদণ্ড কমিয়ে ১০ বছর বহাল থাকে।